সন্তানের এলোপাথাড়ি বটির কোপে যে কারনে খুন হলো মধুমালা

মো. সেলিম মুন্সি : নারায়নগঞ্জ ফতুল্লা রেল স্টেশন এলাকায় মানসিক ভাবে অসুস্থ ছেলের হাতে খুন হলেন মা। নিহতের নাম মধুমালা বেগম (৬০), সে ফতুল্লা রেল স্টেশন এলাকার ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী মো. নূরুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী। তারা দুজনে মিলে এলাকার উকিল বাড়ির মোড়ে ছোট একটি ভাতের হোটেল চালাতো। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার ২রা নভেম্বর রাত ১২ টায়।
নিহতের স্বামী নুরুল ইসলাম মিয়া জানান দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে খুব সুখের সংসার ছিলো তাদের। সিএনজি চালিয়ে ভালোই চলছিলো তাদের আরো সচ্ছলতার আসায় ২০১৫ সালে বড় ছেলে সুমনকে ইরাকে পাঠান তিনি। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর জ্বড়ে আক্রান্ত হয় সুমন। চিকিৎসক তাকে বিভিন্ন ঔষধের পাশাপাশি সুমনের অনিচ্ছা সত্তেও পাওয়ারফুল ইনজেকশান দেয়। এরপর থেকে সুমনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক সমস্যা খুব বেশিরকম হলে ইরাক থেকে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রিয় সন্তানের অবস্থা তখন খুবেই খারাপ ছিলো যা দেখে দিশেহারা হয়ে যান তারা। তখন থেকে নুরুল ইসলাম ও মধুমালা সন্তানের চিকিৎসার জন্য বহু টাকা ব্যয় করেন। তারা তাদের সহায় সম্বল জায়গা সম্পত্তি সবই শেষ করেন ছেলে সুমনের চিকিৎসার জন্য।
দুজনে মিলে ফতুল্লা রেল স্টেশন এলাকায় সারা রাতদিন খেটে ছোট একটি হোটেল চালিয়ে একটানা ৭ বছর বিভিন্ন ভাবে ছেলের চিকিৎসা করেন। এতে সহায় সম্বল হারিয়েও অনেক ঋনগ্রস্থ হয়ে পরেন নুরুল ইসলাম মিয়া ও মধুমালা দম্পত্তি। অনেক সমিতি থেকে কিস্তি আর ব্যাক্তিগত দেনায় আক্রান্ত হয়ে হিমসিম খেতে থাকেন তারা। তাদের প্রায় ৬টি কিস্তি লোন হয়ে যায়। তার উপর ছেলের প্রতিদিন ৩শত থেকে ৪ শত টাকা সিগেরেট খরচ দিতে হয়। মানসিক ভাবে অসুস্থ ছেলে নেশাগ্রস্থ না হলেও চেন স্মোকার হয়ে পড়ে। সিগারেটের টাকা না পেলে আরো পাগলামী বেরে যেত সুমনের। কয়েক বার সিগারেটের টাকা না পেয়ে ঘরে আগুন দেয় সুমন। চার-পাঁচ দিন সিঙ্গারা পুরি হোটেল থেকে পাশের নর্দমায় ফেলে দেয়াসহ বিভিন্ন রকম পাগলামী করতো।
ঘটনার দিন রাতে কিস্তির টাকা পরিশোধ ও হোটেলের জন্য পরের দিনের নাস্তা আর দুপুরের খাবারের বাজার করে নুরুল ইসলাম মিয়ার কাছে মাত্র ৭ টাকা ছিলো। সুমন সিগেরেটের জন্য রাত ১১টার দিকে ১০ টাকা চাইলে সে তাকে পকেট থেকে ৭ টাকাই দিয়ে দেন। রাত প্রায় ১২ টার দিকে মধুমালা হোটেল থেকে কাঁচাবাজার নিয়ে বাসায় গিয়ে কুটতে বসলে সুমন তার কাছে সিগেরেট কিনার জন্য বাকি ৩ টাকা চায়। মধুমালা বলে আমার কাছে টাকা নাই তখন সুমন খিপ্ত হয়ে তরকারি কোটার বটি হঠাৎ হাতে নিয়ে বলে নাই কেন তাহলে বটির কোপ খা বলে মাথা এবং ঘারে কোপ বসিয়ে দেয়। মধুমালা সেখান থেকে বাচাঁর জন্য চিৎকার দিয়ে বাইরে এসে হোটেলের দিকে তার স্বামী নুরুল ইসলাম মিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকেন। কিছু দুর যাওয়ার পরে তিনি মাটিতে পড়ে যান। ফলে বটি হাতে উত্তেজিত সুমন তাকে ধরে ফেলে মাটিতে পড়া অবস্থায় এলোপাথারি মাথা, মুখসহ শরিরের বিভিন্ন জায়গায় কোপাতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জন জানান তারা দুর থেকে দেখে ধারনা করে বলেছেন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি কোপ দিয়েছে মধুমালার শরীরে। এতে তার শরীর এতো ক্ষতবিক্ষত হয় যে চেহার চিনার কোন উপায় ছিলো না। দুটি হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে জুলে ছিলো। সকলের ধারনা সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ রাস্তায় পরে থাকা মধুমালার নিথর নিস্তব্ধ দেহ তুলে থানায় নিয়ে যায়।
এব্যপারে নিহতের স্বামী নুরুল ইসলাম মিয়া ফতুল্লা মডেল থানায় বাদী হয়ে ৩/১১/২৩ তারিখে ছেলে সুমনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।