এই জটিল মূহুর্তে ফতুল্লা পাইলট স্কুলের দ্বায়িত্ব নেয়া সাহসীকতার পরিচয়
মো. সেলিম মুন্সি : ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ করার মুহূর্তটি ছিলো খুবেই জটিল এবং স্কুলের জন্য একটি ক্রাইসিস মুহূর্ত।
কারন একদিকে ছিলো প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, অভিভাক ও এলাকাবাসীর আপোষহীন আন্দোলন অপরদিকে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের স্কুলে তার পদে থাকার বৃথা চেষ্টা। পাশাপাশি প্রাধান শিক্ষক কার কাছে পদত্যাগ করবেন, পদত্যাগ এর পরে দ্বায়িত্ব কে নিবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা।
এই ব্যপারে কথা হয় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব আফরোজা পলি’র সাথে। তিনি আজ ২৩ দিনের মাথায় স্কুলের অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, এমন কোন দিক নেই প্রতিষ্ঠানটিতে সমস্যা নেই। তিন মাস যাবত শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন নেই, পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, স্কুলের কোন কাগজপত্র ঠিক নেই, ২০১৮ সাল থেকে রেজিষ্ট্রেশন হালনাগাদ করা হয় না, স্কুলের কয়েকটি মামলা আছে তা কি অবস্থায় আছে জানি না, সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে স্কুলে বর্তমানে কোন ফান্ড নেই এমনকি অফিস স্টাফরা তেমন ভাবে কোন সহোযোগিতা করছে না। সেই সাথে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আগের মতো কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না, ওদের পড়াশোনায় মনোযোগী করাতে পারছি না। প্রতিদিন টিএনও মহোদয়ের কাছে যাই কি করবো বুঝতে। স্যারের ব্যাস্ততার কারনে তেমন ভাবে কথা বলাও যাচ্ছে না।
প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ করার মুহূর্তটি ছিলো খুবেই জটিল। জানা যায় বিগত ৯ মাস যাবত স্কুলের কোন কমিটি নেই, ফলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবর পদত্যাগ পত্র দিবে তা হচ্ছে না, ৫ ই আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পড়ে প্রশাসন কিছুটা এলোমেলো ফলে জেলা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বা টিএনও কেহ তেমন ভাবে অফিস করছে না বা দ্বায়িত্ব নেয়ার মতো অবস্থায় নেই। স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে থেকেও দ্বায়িত্ব নিতে সবাই অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই বয়েসের দিক থেকে ছোট স্কুলে বদরাগী হিসেবে পরিচিত সহকারী প্রধান শিক্ষক আফরোজা পালিন (পলি) -এর উপর দ্বায়িত্ব পরে। নিয়ম মোতাবেক সেই জটিল মূহুর্তে ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব নিতে রাজি হন।
অবশেষে বিদ্যালয়ের চার বারের নির্বাচিত সাবেক অভিভাবক সদস্য তুষার আহমেদ মিঠু, বিদ্যালয়ের শুভাকাঙ্খী রুহুল আমিন প্রধানের হস্তক্ষেপে ও বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মুক্তিযুদ্ধা মোহাম্মদ আলীর পরামর্শে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সিনিয়র শিক্ষকদের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন তার দ্বায়িত্ব ভার সহকারী প্রধান শিক্ষক আফরোজা পলিনের নিকট লিখিতভাবে তার দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন। একটি সূত্র জানায় আনোয়ার হোসেন স্যারের দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করার পরে শুরু হয় গোপনে অন্য এক খেলা। যা এখনো সাধারণ মানুষ জানতে পারেননি। তবে সেটার প্রভাব স্কুলে পরে। পরের দিন ২ রা সেপ্টেম্বর পলি আপা স্কুলে এসে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে সংকটের মুখে পরে।
এই অবস্থায় পলি আপার দ্বায়িত্ব নেয়াটাকে এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিবর্গ, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। তার এই সাহসীকতাকে বিজ্ঞমহলের অনেকেই সাধুবাদ জানান।