মানুষকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে বাবা, মা ও শিক্ষকের অবদান সবচেয়ে বেশি- এপিজে আবদুল কালাম
মো. সেলিম মুন্সি : আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন আবদুল কালাম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির (অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের) রামেশ্বরমের এক তামিল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন ছিলেন একজন নৌকামালিক ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাতা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আপাত সাধারণ সেই পরিবারে ছিল অসাধারণ জীবনবোধের প্রবাহ।
অর্থের দারিদ্র্য ছিল, কিন্তু পিতার মননের প্রাচুর্য ছোটবেলাতেই তার মনে গেঁথে দিয়েছিল বড় মানুষ হওয়ার, ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন। পরিবারের কাছ থেকে নৈতিক শক্তি ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আবদুল কালাম। এজন্যেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং মানুষগুলোকে সুন্দর মনের করে গড়ে তুলতে পারেন সমাজের তিন জন মানুষ তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক। আধুনিক মানুষের মধ্যে নৈতিক শক্তির জাগরণের লক্ষ্যেই তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সবার প্রতি তার আহ্বান ছিল, তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশ করেছিলেন ব্যক্তিগত কিছু জিনিস ও বইপত্রসহ দুটো সুটকেস নিয়ে। যেদিন রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন, সেদিনও তার সাথে সুটকেস মাত্র দুটোই। দায়িত্বে থাকাকালীন যত উপহার-উপঢৌকন তিনি পেয়েছেন, সব রেখে এলেন অবলীলায়। তার বক্তব্য ছিল, এর কিছুই তো ব্যক্তি কালামের নয়। সবই দেয়া হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মানে। তাই এসব উপহার রাষ্ট্রের তত্তাবধানেই থাকা উচিত।
২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পূর্ণ করার পর তিনি সারা ভারতবর্ষ চষে বেড়িয়েছেন শিশু-কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে। মহৎ লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে নিরন্তর স্বপ্ন দেখিয়েছেন নতুন প্রজন্মকে। লিখেছেন উইংস অব ফায়ার, ইগনাইটেড মাইন্ডস, ইনডমিটেবল স্পিরিট, ইউ আর বর্ন টু বেøাসম, মাই জার্নি, টার্নিং পয়েন্টস-এর মতো বই, যা বিশ্বাস ও আশার একেকটি ফল্গুধারা। তিনি ছিলেন কর্মে বিশ্বাসী একজন মানুষ। কাজই ছিল তার আনন্দ। তার অনুরোধ ছিল আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা কোরো না। আমাকে যদি ভালবাসো, একদিন বরং অতিরিক্ত কাজ করো।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট বিজ্ঞানের প্রসারে তার অবদান অতুলনীয়। একদিকে তিনি যেমন ছিলেন একজন বরেণ্য বিজ্ঞানী, তেমনি ছিলেন কল্যাণচিন্তা ও নৈতিকতায় অনুপ্রাণিত এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ধ্যানী, জ্ঞানী ও কর্মী। ‘কালাম’ শব্দের অর্থ হলো বাণী। তার পুরো জীবনটাই একটা বাণী। এ বাণী জ্ঞান, কর্ম ও নৈতিকতার। তার কথা ও কাজ দিয়ে উত্তর প্রজন্মের কোটি মানুষের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন এক অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে।