নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের ‘বাপ ডাকিয়ে দেব’ বলে হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বিএনপির সভাপতি মু. গিয়াস উদ্দিনেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
মো. সেলিম মুন্সী : নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের ‘বাপ ডাকিয়ে দেব’ বলে হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের প্রতি ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের আয়োজিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে এই আলটিমেটাম দেন ফতুল্লা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ। এই প্রতিবাদ সমাবেশে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. মাসুম, সহসভাপতি সেলিম মুন্সী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম লিটন, নারায়ণগঞ্জ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সবুজ, ফতুল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল মাহমুদ, মডেল রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি রফিকুল্লাহ রিপন, ফতুল্লা রিপোটার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম সুজন, আওয়ার নারায়ণগঞ্জ ডটকমের সম্পাদক মামুনুর রশীদ মুন্না, দৈনিক খবর পত্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মনির হোসেনসহ প্রমুখ।
এ সময় সাংবাদিক নেতারা জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিনের হুমকিমূলক বক্তব্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি হুমকিমূলক বক্তব্যের ব্যখ্যা না দিলে গিয়াসউদ্দিন ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত হবেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন ৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন। তিনি ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি গত শনিবার ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেট দিচ্ছি। যদি বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেব’।
ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. মাসুম বলেন, ‘সাংবাদিকরা কারো গোলাম না, তিনি চোখ রাঙাবেন আর সাংবাদিকরা ভয় পেয়ে যাবেন সেটা হবে না। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দাবি হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় আমরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো’।
ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সেলিম মুন্সী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা সর্বপ্রথম গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরে। গিয়াসউদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছে তা ফ্যাসিস্টের অংশ। তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন’।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, বিএনপির কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের তিনি ‘বাপ ডাকিয়ে দেবেন’ এবং সাংবাদিকদের ‘সোজা হয়ে যাও’ বলে হুমকি দেন।
তার এই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত জেলার সাংবাদিকরা। ইতোমধ্যে একাধিক জরুরি সভা ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক জোট, নাগরিক কমিটি ও বাম জোটের নেতারা।